মির্জাপুর প্রতিনিধি: মির্জাপুরে ডিসলাইনের তার গলায় বেঁধে চলন্ত ট্রেনের ছাদ থেকে পড়ে এক যুবক নিহত ও অপর তিনযাত্রী আহত হয়েছেন। সোমবার ২৬ জুন রাত বারোটার দিকে বঙ্গবন্ধু রেল লাইনের মির্জাপুর রেলস্টেশনের পূর্ব গেইট বাওয়ার কুমারজানি এলাকায় এই দুর্ঘটনা ঘটে। এদের মধ্যে আহতযাত্রী রিমন হোসেনকে কুমুদিনী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তার হাত ও পা ভেঙে গেছে বলে চিকিৎসক জানিয়েছেন।
মির্জাপুরে আরেক যাত্রীকে বাঁচাতে গিয়ে চলন্ত ট্রেনের ছাদ থেকে পড়ে সজিব হোসেন (২০) নামে এক যুবক নিহত হয়েছেন। নিহত সজিব হোসেন নওগাঁ সদর উপজেলার রাইজুর গ্রামের আব্দুল জলিলের ছেলে। আহত একজনের পরিচয় জানা গেছে। তিনি হলেন, একই জেলার বদলগাছি উপজেলার ওলাবাজার গ্রামের এনামুল হকের ছেলে রেমন হোসেন (২৬)।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সোমবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা লালমনি এক্সপ্রেস ট্রেনটি রাত ১২টার দিকে মির্জাপুর স্টেশনের পূর্ব গেটের কাছে বাওয়ার কুমারজানি নামক স্থানে পৌঁছায়। এ সময় রেললাইনের ওপর দিয়ে টানানো ডিস লাইনের তারে আটকে ট্রেনের ছাদ থেকে পড়ে যান যাত্রী সজিব ও রেমন হোসেন। সজিব মারা ঘটনাস্থলে মারা যান। রেমন গুরুতর আহত হন। তাকে উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা কুমুদিনী হাসপাতালে ভর্তি করেন। ডিস লাইনের তারে আটকে আরও দুই যাত্রী আহত হলেও তারা নিচে পড়েননি। তাদেরকে টাঙ্গাইল সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
দুর্ঘটনায় আহত রেমন হোসেন বলেন, গাজীপুর স্ট্যান্ডার্ড সিরামিক কারখানায় চাকরি করি। ট্রেনের ছাদে গাদাগাদি করে বসে ঈদের ছুটিতে বাড়ি যাচ্ছিলাম। মির্জাপুর রেল স্টেশনের কাছে আসার পর একজন লোক পড়ে যাওয়ার সময় আমার পা টেনে ধরলে দুজনই নিচে পড়ে যাই। লোকটি ওখানে মারা যায়, আমি আল্লাহর রহমতে বেঁচে আছি।
মির্জাপুর স্টেশনের গেটম্যান শান্ত ইসলাম বলেন, দিনগত রাত ১২টার দিকে আহত লোকটি আমার কাছে এসে দুর্ঘটনার খবর দেন। পরে ফায়ার সার্ভিসে খবর দিলে তারা এসে আহত ব্যক্তিকে কুমুদিনী হাসপাতালে নিয়ে যান। খবর পেয়ে টাঙ্গাইল রেলওয়ে পুলিশ সকালে এসে নিহতের মরদেহটি উদ্ধার করে। গেইটম্যান আরো জানান, গতকাল সোমবার তিনি ডিসলাইন ব্যবসায়ীকে বলেছিলেন তারগুলি উঁচু করে টেনে দিতে। কিন্ত তিনি তার কথা শুনেনি। রাতেই দুর্ঘটনা ঘটেছে।
টাঙ্গাইল রেল পুলিশ ফাঁড়ির কনস্ট্রেবল আব্দুল মালেক জানান, খবর পেয়ে সকাল পাঁচটার দিকে মির্জাপুর এসে নিহত এক যুবকের মরদেহ উদ্ধার করেছেন।
রেললাইন সংলগ্ন স্থানীয় বাসিন্দা ওয়াজউদ্দিন সিকদার ও আইয়ূব খান জানান, রাত সাড়ে বারোটার দিকে গেইটম্যান শান্ত ইসলাম তাদেরকে জানালে তারা এসে ফায়ার সার্ভিস সদস্যদের সহায়তায় আহত যুবককে কুমুদিনীতে পাঠান এবং পরে নিহত যুবকের লাশ রেললাইন থেকে খুঁজে বের করেন। তারা ডিসলাইন ব্যবসায়ীর অবহেলার কারণে এই দুর্ঘটনার জন্য তার শাস্তি দাবি করেন।
মির্জাপুর রেলস্টেশনের মাস্টার কামরুল হাসান বলেন, ঢাকা থেকে লালমনিরহাটগামী লালমনি এক্সপ্রেস ট্রেনটি মির্জাপুর স্টেশনে আসার আগেই দুর্ঘটনাটি ঘটে। টাঙ্গাইল রেলওয়ে পুলিশ সকালে মরদেহ উদ্ধার করে নিয়ে গেছে।
বাংলাদেশ রেল পুলিশ টাঙ্গাইল ফাঁড়ির ইনচার্জ উপপরিদর্শক (এসআই) আলী আকবর জানান, আহত ও নিহতের পরিবারের সদস্যদের খবর দেয়া হয়েছে। আইনী প্রক্রিয়া শেষে মরদেহ পরিবারের নিকট হস্তান্তর করার প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে।