মির্জাপুর প্রতিনিধি: মির্জাপুর উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নে ঝিনাই ও বংশাই নদের তীব্র ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। ভাঙনের তীব্রতায় স্থানীয় বাজার, ফসলি জমি, ঘরবাড়ি ঝুঁকিতে রয়েছে। রাস্তার পাশ্ববর্তী কয়েকটি বিদ্যুতের খুঁটিও হুমকির মুখে রয়েছে। খুঁটিগুলো নদে চলে গেলে ১৫টি গ্রাম বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে বলে আশংকা করা হচ্ছে। গত এক সপ্তাহ ধরে ভাঙনের তীব্রতা বাড়ায় তীরবর্তী মানুষ দিশাহারা হয়ে পড়েছেন।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ভাঙনের ফলে গত কয়েক বছরে ফতেপুর ইউনিয়নের এলাকার একটি মন্দিরসহ ২০০ একর জমি ও দুই শতাধিক বসতবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। সর্বশেষ গত শুক্রবার রাতে ফতেপুর বাজারের একাংশ নদে বিলীন হয়। এছাড়া মির্জাপুরের একাব্বর হোসেন সেতু, চাকলেশ্বর উচ্চবিদ্যালয়, থলপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কাটাখালী বাজারসহ পাশ্ববর্তী এলাকাও ঝুঁকিতে রয়েছে।
সরেজমিন দেখা গেছে, ঝিনাই নদের থলপাড়া, ফতেপুর বাজার, বাদ্যকর পাড়া, হিলড়া, কাটাখালী বাজার, চাকলেশ্বর এবং বংশাই নদের গোড়াইল, ত্রিমোহন, কুমারজানী ও দেওহাটা এলাকায় ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। এর মধ্যে ঝিনাই নদের ফতেপুর ও থলপাড়া এবং বংশাই নদের গোড়াইল ও কুমারজানীতে তীব্রতা বেশি ভাঙনের। উপজেলার কুর্ণী-ফতেপুর সড়কের ফতেপুর বাজারের দক্ষিণ পাশে ভেঙে গেছে প্রায় ৩০০ ফুট পাকা সড়ক। এছাড়া প্রায় তিন বছর আগে কাটাখালী বাজার থেকে বৈলানপুর পর্যন্ত রাস্তায় একটি সেতুসহ প্রায় ৫০০ ফুট পাকা রাস্তা ভেঙে গেলেও আর পাকা রাস্তা মেরামত করা সম্ভব হয়নি। পার্শ্ববর্তী হিলড়া গ্রামের ভেতর দিয়ে প্রায় দুই কিলোমিটার ঘুরে স্থানীয়রা যাতায়াত করেন।
কাটাখালী বাজারের পাশের বাসিন্দা তায়েব হোসেন জানান, গত বছরের ভাঙনে ঝিনাই নদে বিলীন হওয়ার আগমুহূর্তে কর্তৃপক্ষ বিদ্যুতের খুঁটি ও তার সরিয়ে নেয়। পরবর্তীতে সেখানে থাকা তিনটি খুঁটির মধ্যে একটি নদে পড়ে গেছে। বর্তমানে বিদ্যুতের তিনটি ট্রান্সফরমারসহ আরও কয়েকটি খুঁটি ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষকে তার সরিয়ে নিতে জানানো হলেও আজ পর্যন্ত তারা কোন পদক্সেপ নেননি। ওই খুঁটি ও তার নদে চলে গেলে থলপাড়া, ফতেপুর, সুতানড়ী, পারদিঘী, হিলড়া, আদাবাড়িসহ আশপাশের অন্তত ১৫টি গ্রাম বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে বলে আশংকা করা হচ্ছে।
স্থানীয় কয়েকজন বলেন, ঝিনাই ও বংশাই নদের বিভিন্ন স্থানে প্রতিবছর প্রশাসনের ও রাজনৈতিক নেতাদের প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ ইন্ধনে খননযন্ত্র দিয়ে বালু তোলা হয়। ফলে বর্ষার শুরুতেই নদে পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ব্যাপকভাবে ভাঙন শুরু হয়।
থলপাড়া গ্রামের পশ্চিমপাড়া এলাকায় ঝিনাই নদের পাশে ভাঙনের তীব্রতার কারণে আবাদি জমি নদে বিলীন হচ্ছে। দরিদ্র সংখ্যালঘু পরিবারের সদস্যরা জমি, ফসল রক্ষা করতে চেষ্টা করেও পারছেন না। তাঁরা অন্যস্থানে সরিয়ে নিচ্ছেন তাদের ঘরের বেড়া, চাল। এলাকার বাসিন্দারা বলেন, শুকনো মৌসুমে খননযন্ত্র দিয়ে নদে বালু তোলার কারণে তাঁদের ভিটে নদে চলে গেছে। নদের বালু তোলা বন্ধের জন্য তারা স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ মির্জাপুরের অনেকের কাছে ধরনা দিয়েও কোন লাভ হয়নি।
ফতেপুরের থলপাড়ার বাসিন্দা সাংবাদিক আবুল কাশেম খান বলেন, স্থানীয় প্রভাবশালী লোকজন সকল মৌসুমেই অবৈধভাবে ড্রেজার দিয়ে মাটি কাটে। নদে সবসময় বড় বড় ট্রলার চলে। ভাঙনের কারণে গত তিন বছরে ঝিনাই ও বংশাই তীরে কমপক্ষে ৭৫টি বাড়ি বিলীন হয়েছে। অন্তত ২৫ একর জমি নদীতে গেছে। ওই এলাকায় বিদ্যুতের খুঁটি, মন্দির, বসতঘর, পামওয়েলসহ বিভিন্ন বনজ ও ফলদ গাছ, আবাদি জমি ঝুঁকিতে রয়েছে। কিন্তু তাঁদের দিকে কেউ তাকাচ্ছেন না।
টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ সাজ্জাদ হোসেন জানান, গত শুক্রবার তিনি মির্জাপুরের ভাঙনকবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন। যেসব এলাকায় বেশি ভাঙনের কবলে পড়েছে, তা চিহ্নিত করা হয়েছে। এরমধ্যে ভাঙন রোধে নদীর তীরবর্তী এলাকায় জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় কাজ শুরু করা হবে।