মধুপুর প্রতিনিধি: টাঙ্গাইলের বিএডিসি কর্তৃপক্ষ নির্ধারিত কৃষকদের কাছ থেকে আমন ধান সংগ্রহের নিয়ম থাকলেও দালালের মাধ্যমে জেলার বাইরে থেকে নিম্নমানের ধান সংগ্রহ করে গুদামজাত করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে জেলার ক্ষতিগ্রস্থ প্রান্তিক কৃষকরা ক্ষোভ জানালেও কর্তৃপক্ষ তা অস্বীকার করেছেন। বিএডিসি কর্তৃপক্ষ বলছেন, জেলার বাইরে থেকে যে ধান সংগ্রহ করা হচ্ছে তা তদন্ত করে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জানা যায়, জেলার বিভিন্ন কৃষকদের নাম বিএডিসির ধান সংগ্রহের তালিকায় থাকলেও সেই কৃষকরা ধান দেওয়ার বিষয়ে কিছুই জানেন না। কৃষকদের অভিযোগ সরকারিভাবে তাদের কাছ থেকে কোনো প্রকার ধান সংগ্রহ করা হচ্ছে না। বিএডিসি কর্তৃপক্ষের যোগসাজশে কয়েকজন দালালের মাধ্যমে জেলার বাইরে থেকে জামালপুর, সরিষাবাড়িসহ বিভিন্ন স্থান থেকে নিম্নমানের ধান সংগ্রহ করেছেন।
সরেজমিনে টাঙ্গাইলের বিএডিসি কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, বিভিন্ন স্থান থেকে ছোট ছোট মিনি ট্রাক নিয়ে ধান বিক্রি করতে এসেছেন কয়েকজন ব্যক্তি। এসময় একব্যক্তি জানান, সদর উপজেলার ভাতকুড়া গ্রামের কয়েকজন কৃষকের ধান এনেছেন । তবে কোন কৃষকের ধান এনেছেন তাদের নাম তিনি বলতে পারেননি।
এসময় এই ধান বহনকারী ট্রাকের চালক সুজায়েত হোসেন জানান, তিনি ধানগুলো নিয়ে জামালপুর জেলা থেকে টাঙ্গাইলের বিএডিসিতে এসেছেন। আর ধানগুলো কোথা থেকে কেনা হয়েছে তা তিনি জানেন না; এর মালিক তা বলতে পারবেন।
এ সময় ধান সংগ্রহের তালিকায় দেখা যায়, গত ১২ জুন টাঙ্গাইল সদর উপজেলার ভাতকুড়া গ্রামের কৃষক ফরিদুলের ব্রি-২৯ জাতের ২৫ বস্তা ও আজাহারের ব্রি-২৯ জাতের ৭২ বস্তা, আয়নালের কাছ থেকে ৩৮ বস্তা ধান কেনা হয়েছে। তবে সরেজমিনে ভাতকুড়া গ্রামের কৃষক ফরিদুল জানান, ১৬৫ শতাংশ জমিতে তিনি ধান রোপণ করেছিলেন। সব ধান তিনি স্থানীয় হাটে বিক্রি করেছেন। সরকারিভাবে তিনি কোনো ধান বিক্রি করেন নি। তবে সরকারি তালিকায় তার নাম কীভাবে এলো তাও তিনি বলতে পারেন না। একই এলাকার আজাহার একই কথা বললেন, তিনি সব ধান হাটে বিক্রি করেছেন। তিনিও সরকারিভাবে কোনো ধান কারো কাছে বিক্রি করেননি।
কৃষকদের অভিযোগে জানা যায়, স্থানীয় দালাল আলিম ও সোহেলের মাধ্যমে বিএডিসি কর্তৃপক্ষ জেলার বাইরে থেকে নিম্নমানের ধান সংগ্রহ করছেন। দুই দিনদিন আগে আলিম ও সোহেলের কাছ থেকে ১৯শ’ বস্তা ধান কেনা হয়েছে। আবার জামালপুর থেকে ধান নিয়ে এসেছেন তারা। এ কারণে বিএডিসির ইনচার্জ রাশেদ এবং সরোয়ারকে বাড়তি টাকা দিতে হয়েছে।
বিএডিসির একজন কর্মচারী নাম গোপন রাখার শর্তে জানান, কয়েকজন দালালের মাধ্যমে বেশির ভাগ ধান সংগ্রহ করা হয়। আর সেই দালালরা টাঙ্গাইল এবং পার্শ্ববর্তী জেলা থেকে সরকারিভাবে সরবরাহ করে থাকে নিম্নমানের ধান কম মূল্যে কিনে। আর সেই সরবরাহ করা তালিকায় জেলার বিভিন্ন কৃষকের নাম তালিকাভূক্ত করা হয়। অথচ সেই কৃষকরা জানে না তাদের কাছ থেকে সরকার ধান সংগ্রহ করছেন। কোন কৃষক তাদের ধান বিক্রি করতে আসলে তাদের জানিয়ে দেওয়া হয় ধানের নমুনা নিয়ে আসতে। পরবর্তীতে ধান দেখাতে এলে বলা হয় ধানগুলো নিম্নমানের, তাই এগুলো সরকারিভাবে নেওয়া সম্ভব নয়। পরে ওই কৃষক বাধ্য হয়ে ধানগুলো হাটে বিক্রি করে।
তিনি আরও জানান, কৃষক যে ধান বাইরে বিক্রি করেন সেই ধানের তুলনায় স্থানীয় দালালের মাধ্যমে যে ধানগুলো কেনা হয় সেগুলো খুবই নিম্নমানের। কর্তৃপক্ষ নিজেদের সুবিধার জন্য বাড়তি টাকার বিনিময়ে এই নিম্নমানের ধান সংগ্রহ করছেন।
বিএডিসির মধুপুর জোন টাঙ্গাইলের উপপরিচালক (ক. গ্রো.) মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ আল-মামুন জানান, ইতিমধ্যে জামালপুর থেকে যে ধান সংগ্রহ করা হয়েছে সে বিষয়টি তিনি জেনেছেন। এ নিয়ে তদন্ত করে জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়া দালালের মাধ্যমে ধান সংগ্রহ করে প্রকৃত কৃষকের নাম তালিকাভুক্ত হওয়ার বিষয়টির খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা করা হবে।