কালিহাতী প্রতিনিধি: কালিহাতী উপজেলায় ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কের পাশে দীর্ঘদিন যাবত সিসা তৈরির কারখানা গড়ে উঠলেও পরিবেশ অধিদপ্তরের নিরব ভূমিকায় এলাকাবাসী ক্ষুব্ধ। স্থানীয় লোকজন এই ‘পমিজান মেটাল’ কারখানার কারণে ব্যাটারির অ্যাসিডের প্রকট গন্ধে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে এবং পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে।
এই অবৈধ সিসা তৈরি কারখানা বন্ধের দাবি স্থানীয়রা জানিয়ে আসলেও কারখানা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই দীর্ঘদিন যাবত এই অবৈধ কারখানা চালানো হচ্ছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, কালিহাতী উপজেলার পৌলি এলাকায় প্রায় এক বছর যাবত এই অবৈধ সিসা তৈরির কারখানা গড়ে তুলেছেন একটি প্রভাবশালী মহল। পৌলি নদীর পাশে গড়ে উঠা এই কারখানা বন্ধের দাবি জানালে তারা নানাভাবে হুমকি ধামকি দিচ্ছেন। রাতদিন এই অবৈধ কারখানা চলার কারণে পরিবেশ ও ফসলি জমির ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে।
চিকিৎসকেরা জানান, ব্যাটারির বর্জ্য পুড়িয়ে সিসা তৈরি করলে তা আশপাশে থাকা মানুষের শরীরে পয়জনিং (রক্তকণিকা ও মস্তিষ্কের কোষ ক্ষতি করা) সৃষ্টি করে। এর ফলে মানসিক বিকৃতি, রক্তশূন্যতা ও মস্তিষ্কের ক্ষতিসাধন হতে পারে। এই অবৈধ সিসা কারখানার নির্গত গ্যাস মানুুষের শ্বাসকষ্ট, হৃদরোগ ও ক্যানসারের মতো রোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। আর কোনো পশু কারখানার আশপাশের ঘাস খেলে অসুস্থ কিংবা মারাও যেতে পারে।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, এই কারখানার পশ্চিমে পৌলি এলাকা এবং পূর্বেও পৌলি এলাকা এবং উত্তর পাশে পৌলি নদী ও বাজার। কারখানা সংলগ্ন ঢাকা-টাঙ্গাইল-মহাসড়ক দিয়ে প্রতিনিয়ত হাজার হাজার যানবাহন চলাচল করে। কারখানার ভেতরে গিয়ে দেখা যায়, একজন গেইটে পাহারা দিচ্ছেন আর ভিতরে শ্রমিকেরা কাজ করছে। চুল্লির মধ্যে অ্যাসিড মিশ্রিত ব্যাটারির বর্জ্য সাজানো আছে। এরপর আগুন দিয়ে তা গলাচ্ছে। পাশেই বৈদ্যুতিক পাখা চলছে। এভাবে বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় সিসা তৈরি হয় ।
কারখানার শ্রমিক রংপুরের সুজন রায় বলেন, ব্যাটারি বর্জ্য বিভিন্ন এলাকা থেকে ট্রাকযোগে কারখানায় আনা হয়। তিন মণ বর্জ্য থেকে দেড় থেকে দুই মণ সিসা তৈরি হয়। এখানে কাজ করার ফলে অনেক সময় শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়। মাঝে মাঝে শরীরও চুলকায়।
পৌলি এলাকার বাসিন্দা রাকিব মিয়া বলেন, সিসা ফ্যাক্টরির কারণে গাছপালার পাতা বিবর্ণ হয়ে ফ্যাকাশে হয়ে যাচ্ছে। কারখানার পাশের ফসলি জমির উৎপাদন কমে যাচ্ছে। এছাড়াও নানা রোগবালাই দেখা দিচ্ছে। আমি যতটুকু জানি এটি অবৈধভাবে পরিচালনা করা হচ্ছে।
মির্জাপুর এলাকার ট্রাক চালক তুহিন মিয়া বলেন, ঢাকা-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়ক দিয়ে যাতায়াত করার সময় পৌলি এলাকায় আসলে গ্যাসের গন্ধ আসে। তখন নাক ও চোখ জ্বলে।
পরিবেশবাদী সংগঠনর নেতৃবৃন্দ বলেন, ব্যাটারি বর্জ্য পোড়ানোর সময় যে ধোঁয়া সৃষ্টি হয়, তার গাড়ির ধোঁয়ার চেয়েও মারাত্বক ক্ষতিকর। এটা মানবদেহ, জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশের জন্য মারাত্বক ক্ষতিকর।
পমিজান মেটালের ম্যানেজার তানভীর আহমেদ বলেন, প্রায় এক বছর যাবত এই কারখানাটি করা হয়েছে। কারখানার জমি আমাদের, তবে মালিক উত্তরবঙ্গের। প্রশাসন, পরিবেশ অধিদপ্তরকে ম্যানেজ করা আছে বলেই প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখনও পর্যন্ত কোন অভিযান করা হয়নি। এছাড়াও কালিহাতী ও এলেঙ্গার গণমাধ্যম কর্মীদের টাকা দিয়ে ম্যানেজ করা আছে। ঈদের সময় তাদের নতুন পাঞ্জাবী উপহার দেয়া হয়।
কালিহাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নাজমুল হুসেইন বলেন, এক গণমাধ্যম কর্মীর মাধ্যমে বুধবার বিষয়টি জানতে পেরেছি। এর আগে আমরা এ তথ্য পাইনি। বিষয়টি খোঁজ নিচ্ছি। পরিবেশ অধিদপ্তর কোন পদক্ষেপ নিলে আমাদের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করা হবে।
এ প্রসঙ্গে টাঙ্গাইল পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক জমীর উদ্দীন বলেন, 'আপনার যদি কোন কথা থাকে তাহলে অফিস টাইমে এসে কথা বইলেন।'