মির্জাপুর প্রতিনিধি: মির্জাপুর উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) মো. আমিনুল ইসলাম বুলবুলের বদলী আদেশ প্রত্যাহারের দাবিতে সুবিধাবাদী একটি মহল মির্জাপুরে মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছে। তার বদলীর আদেশ প্রত্যাহার করে মির্জাপুরে স্বপদে বহাল রাখার দাবিতে ‘মির্জাপুরবাসী’ নামের ব্যানারে সুবিধাবাদী ওই মহল গত সোমবার সকালে মানববন্ধন ও সমাবেশ করার বিষয়টিতে মির্জাপুরে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে।
জানা যায়, উপজেলা পরিষদ চত্ত্বরে মুক্তির মঞ্চের সামনে মানববন্ধনে উপস্থিত অনেকেই মাটি, বালু ও ইটভাটা ব্যবসার সাথে জড়িত। এছাড়া অনেকেই সহকারি কমিশনার (ভূমি) অফিসের চিহ্নিত তদবিরবাজ।
সমাবেশে ফতেপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. আব্দুর রউফ, আজগানা ইউপি চেয়ারম্যান ও ইটভাটা ব্যবসায়ী আব্দুল কাদের শিকদার, মির্জাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক আবু রায়হান সিদ্দিকী, উপজেলা আওয়ামী লীগের শ্রম ও জনশক্তি বিষয়ক সম্পাদক মীর চঞ্চল মাহমুদ, মির্জাপুর পৌরসভার ৫ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাবেক কাউন্সিলর মোয়াজ্জেম হোসেন, দলিল লেখক ও ভেন্ডার আলম মিয়া প্রমুখ বক্তৃতা করেন।
গত বছরের ১৩ এপ্রিল আমিনুল ইসলাম বুলবুল মির্জাপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) হিসেবে দায়িত্ব পান। ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার গত ২৫ মে তাকে নাগরপুর উপজেলায় এবং দেলদুয়ার উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) সুচি রানী সাহাকে মির্জাপুরে বদলির আদেশ দেন বলে জানা গেছে।
উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) মো. আমিনুল ইসলাম বুলবুল যোগদানের পর এ উপজেলার সাধারণ মানুষ তার অফিসে গিয়ে নামজারি, মিস কেসসহ নানাভাবে হয়রানির শিকার হয়েছেন। তার অফিস থেকে টাকা ছাড়া নামজারি পাওয়া যায় না। এছাড়া সময়মত অফিসে না আসা এবং মুঠোফোন রিসিভ না করারও গুরুতর অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। তাছাড়া তিনি একজনের জমি অন্যজনের নামে নামজারি করে দিয়েছেন। আবার মিস কেসের মাধ্যমে তিনিই তার আদেশ বাতিল করেছেন এমন অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
এ প্রসঙ্গে উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) মো. আমিনুল ইসলাম বুলবুলের সাথে কথা বলার জন্য তাকে অফিসে পাওয়া যায়নি এবং তিনি মোবাইলও রিসিভ করেননি। তবে কয়েকজন ইউনিয়ন ভূমি উপ-সহকারী ও মাটি ব্যবসায়ীদের যৌথ অর্থায়নে মানববন্ধনের ব্যানার-ফেস্টুন ইত্যাদি বানানো হয়েছে বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক সূত্র জানায়।
মির্জাপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর এনায়েত হোসেন মন্টু জানান, যারা মানববন্ধন করেছে তারা ড্রেজার, মাটি ও ইটভাটার সাথে জড়িত। এই কর্মকর্তা রাতে ইনকাম করে থাকেন। রাতে ট্রাক ধরেন আর টাকা নিয়ে ছাড়েন। এ বছর বিগত দিনের সকল রেকর্ড ভেঙ্গে এ উপজেলায় তিন নদী থেকে ড্রেজার ও শতাধিক ভেকু মেশিন দিয়ে মাটি কাটা হয়েছে। এই মাটি পরিবহন করায় রাস্তা ভেঙ্গে মির্জাপুরের যোগাযোগ ব্যবস্থার মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে। তিনি সরকারি আদেশের বিরুদ্ধে মানববন্ধন করিয়েছেন। তাকে আরো আগেই বদলি করা দরকার ছিলো বলে মন্তব্য করেন।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাকিলা বিনতে মতিন সাংবাদিকদের বলেন, এসিল্যান্ডকে নিয়ে মানববন্ধনের বিষয়টি আমি অবগত ছিলাম না। আমার কাছ থেকে কেউ অনুমতিও নেয়নি বলে তিনি জানান।
টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দীন হায়দার জানান, মির্জাপুর ও দেলদুয়ার উপজেলা সহকারি কমিশনারের বদলির আদেশ হয়েছে। দ্রুত সময়ে তারা তাদের কর্মস্থলে যোগদান করবেন বলে জানান।
ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার মো. সাবিরুল ইসলামের সঙ্গে মুঠোফোনে উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) আমিনুল ইসলাম বুলবুলের বদলির আদেশ প্রত্যাহার করে স্বপদে বহাল রাখার দাবিতে মানববন্ধন ও সমাবেশের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই।