নিজস্ব প্রতিবেদক: টাঙ্গাইলের রাবনা নয়াপাড়া এলাকার হালিমা বেগম অভাব অনটনের সংসারে সচ্ছলতা ফেরাতে কেঁচো সার উৎপাদন করে সফল উদ্যোক্তা হয়েছেন। বাড়ির ভিটাতেই টিনের ঘর তুলে ভার্মি কম্পোস্ট বা কেঁচো সার উৎপাদন করে খরচ বাদ দিয়ে মাসে ৩০-৪০ হাজার টাকা আয় করছেন তিনি। সেই আয় থেকে তিনি সংসারের যাবতীয় খরচ চালানোর পর লোন নেওয়া টাকা শোধও করছেন।
উদ্যোক্তা হালিমা বেগম বলেন, শুরুতে টিনের ঘরে গরুর ফার্ম তৈরী করে গরুর দুধ বিক্রি করে সংসারে স্বচ্ছলতা আনার চেষ্টা করছেন। পরে গৃহপালিত গরুর গোবরকে কাজে লাগিয়ে জাপানী কেঁচো কিনে কয়েকটি ছোট টিনের ঘর তুলে ভার্মি কম্পোস্ট বা কেঁচো সার উৎপাদন শুরু করেন। ২০০৮ সালে কেঁচো সার উৎপাদনে যাত্রা শুরু করলেও প্রথম দিকে তেমন সুবিধা করতে পারেননি। মূলত প্রচারের আলোয় না থাকায় ও চাহিদা কম থাকায় উৎপাদিত কেঁচো সার বিক্রি করতে সমস্যা হচ্ছিল। যে কারনে দুই বছর পর সার উৎপাদন বাদ দিয়ে গরু পালন নিয়ে ব্যস্ত থাকেন।
তবে ২০১৫ সাল থেকে আবারও পূর্ন উদ্যমে কেঁচো সার বা জৈব সার উৎপাদন শুরু করেন। এবার আর পিছনের ফিরে তাকাতে হয়নি। কেঁচো সার উৎপাদন করে টনে টনে বিক্রি করে এখন তিনি সফল উদ্যোক্তা। শুরুর দিকে কেঁচো খামারে একা কাজ করলেও এখন তার স্বামী মোয়াজ্জেম হোসেন, ছোট ভাই ও দুইজন মহিলা শ্রমিক নিয়ে সারাদিন কাজ করেন। তার এই 'এম এম ভার্মি কম্পোস্ট' বিভিন্ন উপজেলার কৃষি কর্মকতা ছাড়া বিদেশী পর্যটকরা দেখতে আসেন এবং পরামর্শ দিয়ে যান।
তিনি আরো জানান, কৃষকের মেয়ে দশম শ্রেণি পড়ুয়া হালিমা বেগমের ২০০৩ সালে রাবনা নয়াপাড়া এলাকার মোয়াজ্জেম হোসেনের সাথে বিয়ে হয়। তাদের ঘরে দুটি কন্যা স্থানীয় বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছে। তিনি নিজে কেঁচো সার উৎপাদন নিজে করছেন এবং অন্যকে উৎসাহিত করছেন। গৃহিনী, দুস্থ, বিধবা মহিলাদের কেঁচো সার উৎপাদনে উৎসাহিত করে একটা 'নারী স্বপ্ন উন্নয়ন সংগঠন' নামে একটা সমিতি করেছেন। যেখানে হালিমা বেগম সভাপতি এবং সাথী আক্তার সম্পাদক। সদস্য সংখ্যা ৫২জন। প্রতি বৃহস্পতিবার তারা একত্র হয়ে উন্নয়নমূলক আলোচনা করেন।
হালিমা বেগম কেঁচো সার সফল উৎপাদনের পাশাপাশি সফল কৃষিকর্মী। তিনি তার তৈরী জৈব সার দিয়ে বাড়ীর আশেপাশে বিভিন্ন রকমের সবজি চাষ করে সফলতা লাভ করেছেন। তার বাড়ীতে করল্লা, ডাটা, পাটশাক, ঢেরস, লাউ, কুমরা, আলুছাড়াও বিভিন্ন ধরনের আম, কাঁঠাল ফুল-ফল রয়েছে।
হালিমা বেগম জানান, তিনি গৃহপালিত গরু পালন করে গোবরকে কাজে লাগানোর জন্য পূর্বে দেখে আসা কেঁচো সার উৎপাদনে এগিয়ে আসেন। তার তৈরী জৈব সার ঢাকাসহ সর্বত্র বিক্রি হয়। ড্রাগন চাষীছাড়াও সবজি চাষীরা এই সার ব্যবহার করে থাকেন। শহরের উঁচু উঁচু বিল্ডিংয়ে ছাদে ফল ও ফুলের চাষে জৈব সার ব্যবহার হয়। তিনি শুরুতে হোম ডেলীভারীর মাধ্যমে প্রচুর বিক্রির পর এখন পাইকারী বিক্রি করেন ২০ টাকা কেজিতে এবং খুচরা ২৫টাকা কেজি।
বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন উপ-সহকারী লতিফা আক্তার জানান, হালিমা বেগম পরিশ্রমী ও দক্ষতার গুনেই সফল উদ্যোক্তা হতে পেরেছে, আমি তার প্রকল্পে গিয়েছিলাম। তার জন্য আমার শুভ কামনা রইল। কেঁচো সর্ম্পকে তিনি বলেন, কেঁচো সার প্রয়োগে যে কোনো ফসলের ফলন ভালো হয়। ফসলের রোগবালাই কম হয়। মাটির গুনাগুন বেড়ে যায়। কৃষি অফিস থেকে উদ্যোক্তাদের পরামর্শ ও সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে।