ভূঞাপুর প্রতিনিধি: মহান মে দিবসকে কেন্দ্র করে ভূঞাপুরে বিভিন্ন সড়কে ভাড়া বৃদ্ধির ঘোষণা দিয়েছেন উপজেলার এক আওয়ামী লীগ নেতা আজহারুল ইসলাম আজহার। পরিবহনে সরকার নতুন করে যানবাহনের ভাড়া বৃদ্ধি না করার পরেও এবং সরকার বা জেলা শ্রমিক ফেডারেশনের সিদ্ধান্ত ছাড়া এই ভাড়া বৃদ্ধির ঘোষণাকে প্রকাশ্যে চাঁদা তোলা হচ্ছে বলে জানিয়ে চরম ক্ষোভ করেছেন যাত্রীরা।
ভাড়া বৃদ্ধির ফলে একদিকে যেমন স্কুল-কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থী ও অভিভাববকরা বিপাকে পড়েছেন, অন্যদিকে যাত্রীরা সিএনজি-অটো রিকশা শ্রমিকদের সাথে তর্কবিতর্কে জড়াচ্ছে। নানা অজুহাতে শ্রমিক ইউনিয়ন নেতারা নিজেদের ইচ্ছে মতো ভাড়া বৃদ্ধি করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ভাড়া বৃদ্ধির ঘোষণার দিন থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকসহ নানা মহলে সমালোচনার ঝড় বইছে।
জানা যায়, গত সোমবার মহান মে দিবসে টাঙ্গাইল জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য ও সিএনজি-অটোরিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের উপজেলার সভাপতি উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা আজহারুল ইসলাম আজহার দেড়গুণ ভাড়া বৃদ্ধির ঘোষণা দেন। এ সময় উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খন্দকার জাহিদ হোসেনসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।
আওয়ামী লীগ নেতার ভাড়া বৃদ্ধির ঘোষণায় ভূঞাপুর থেকে গোবিন্দাসী টি-রোড, স্কুল রোড ও বটতলা আগের ভাড়া ছিল ১০ টাকা। এখন ৫ টাকা বৃদ্ধি করে ১৫ টাকা করা হয়েছে। মাটিকাটা ১৫ টাকার ভাড়া ২০ টাকা। ভূঞাপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব পাথাইলকান্দি বাজার ও রেলস্টেশন পর্যন্ত ৩০ টাকার ভাড়া থেকে ১০ টাকা বৃদ্ধি করে এখন ৪০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
এছাড়া ভূঞাপুর থেকে এলেঙ্গার ভাড়া ৩০ টাকা। তা বৃদ্ধি করে ৪০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এই রোডে আগে ২৫-৩০ টাকায় এলেঙ্গা যাওয়া যেত। ভূঞাপুর থেকে নলিন ও ফলদার ভাড়া ছিল ২৫ থেকে ৩০ টাকা। এখানেও ১০ টাকা ভাড়া বৃদ্ধি করে ৪০ টাকা করেছে। ঘাটাইলের ভাড়া বৃদ্ধি না করা হলেও পরবর্তীতে বৃদ্ধিরও ঘোষণা দেওয়ার কথা রয়েছে।
বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব পাথাইলকান্দি এলাকার শিক্ষক হাসান মাহমুদ বলেন, পাথাইলকান্দি বাজার থেকে ভূঞাপুরের ভাড়া ছিল ৩০ টাকা। গতকাল সিএনজিতে ওঠতেই সিএনজি চালক জানালেন ৪০ টাকা। এরআগে ২৫ টাকার ভাড়া করে ৩০ টাকা ছিল। এভাবে ভাড়া বৃদ্ধির কোনো মানেই হয় না। দ্রব্যমূল্যের দাম বৃদ্ধির অজুহাতে ভাড়া বৃদ্ধি করাটা সমুচিত হয়নি। এই ভাড়া বৃদ্ধি প্রত্যাহারের দাবি করছি।
কলেজ ছাত্রী সুমাইয়া খাতুন জানান, তাকে সিংগুরিয়া থেকে ভূঞাপুরে দিনে দুইবার যাতায়াত করতে হয়। সিংগুরিয়া বাসস্ট্যান্ড থেকে আগে ভূঞাপুর বাসস্ট্যান্ডের ভাড়া নিতো ১০ টাকা। দু’দিন ধরে ৫ টাকা ভাড়া বেশি নিচ্ছেন। ভাড়া বৃদ্ধির বিষয়ে তাদের কাছে জানতে চাইলে বলেন- নেতারা ভাড়া বৃদ্ধি করেছে।
সিএনজি চালক রফিকুল ইসলাম ও ইমরান জানান, সব জিনিষের দাম বেড়ে গেছে। নতুন করে গ্যাসের দাম বৃদ্ধি না হলেও সিএনজি যাবতীয় যন্ত্রাংশের দাম বাড়ছে কয়েকগুণ। যার কারণে অতিরিক্ত ভাড়া নেয়া হচ্ছে।
উপজেলা সিএনজি-অটো রিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি ও জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য আজহারুল ইসলাম আজাহার ভাড়া বৃদ্ধির যুক্তি তুলে ধরে মুঠোফোনে জানান, গ্যাসসহ দেশে সব জিনিসের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। দেড় বছর আগে ভাড়া বৃদ্ধি করা হয়েছিল। সেই আগের ভাড়ায় তাদের পোষে না। সরকার নতুন করে ভাড়া বৃদ্ধি করেনি, তাহলে আপনারা কেন ভাড়া বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিলেন- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ফোনে সবকিছু বলা যায় না।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. বেলাল হোসেন জানান, সরকার নতুন করে সড়ক পরিবহনে ভাড়া বৃদ্ধির কোনো ঘোষণা বা প্রজ্ঞাপন দেয়নি। স্থানীয় সিএনজি-অটোরিকশা শ্রমিক সংগঠন থেকে ভাড়া বৃদ্ধির যে ঘোষণাটি দিয়েছে তা অন্যায় ও অনিয়মতান্ত্রিক। বিষয়টির ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
টাঙ্গাইল জেলা শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ও টাঙ্গাইল-২ (ভূঞাপুর-গোপালপুর) আসনের সংসদ সদস্য ছোট মনির বলেন, ভূঞাপুরে সিএনজি ও অটোরিকশা ভাড়া বৃদ্ধির বিষয়ে জানতে পেরেছি। শ্রমিক ফেডারেশনের পক্ষ থেকে ভাড়া বৃদ্ধির কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। আলোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।