সখীপুর প্রতিনিধি: সখীপুর উপজেলায় হারিয়ে যাওয়া ছেলের অপেক্ষায় দীর্ঘ ১২ বছর ধরে পথ চেয়ে রয়েছেন এক বৃদ্ধ দম্পতি। এই দম্পতির বাড়ি সখীপুর পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডে। বেদনাকাতর বাবা কানাই লাল পেশায় নরসুন্দর এবং মা চায়না রাণী গৃহিণী। সখীপুর উপজেলা পরিষদ গেটেই ছোট্ট সেলুন পরিচালনা করে কোনোমতে সংসার চালান কানাই লাল।
২০১১ সালের ৩০ অক্টোবর রাতে কানাই লাল ও চায়না রাণী দম্পতির একমাত্র ছেলে সত্য চন্দ্র শীল (বর্তমান বয়স ২৮) অভিমান করে বাড়ি ছেড়ে চলে যায়। ঘটনার প্রায় ১২ বছর পেরিয়ে গেলেও ছেলেটি আর ফিরে আসেনি। ছেলের অপেক্ষায় বাবা-মা এখনো পথ চেয়ে বসে থাকেন।
সম্প্রতি পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০১১ সালের অক্টোবরে কানাই লালের মা ননী বালা মারা যান। তাঁকে দাহ শেষে রাতে পরিবারের লোকজন নিয়ে পুকুরে গোসল করতে যান তিনি। এ সময় তুচ্ছ ঘটনায় ভাগনে বিশ্বজিতের সঙ্গে ছেলে সত্য চন্দ্রের ঝগড়া হয়। দুজনকেই ধমক দিয়ে বাড়ি নিয়ে যান কানাই লাল। সেই রাতে সত্য চন্দ্র বাবার কাছে ভাগনে বিশ্বজিতের ব্যাপারে নালিশ দেন। তাৎক্ষণিক বিচার অন্যথায় ত্যাজ্য করে দিন বলে কান্নাকাটি শুরু করেন ছেলে সত্য চন্দ্র।
কানাই লালের একদিকে মা হারানোর শোক, অন্যদিকে ছেলের এমন বিব্রতকর আবদার। তিনি পরদিন বিচারের আশ্বাস দিলেও ছেলের মন গলেনি। ওই তুচ্ছ ঘটনায় সেই রাতেই অভিমান করে বাড়ি ছাড়ে ছেলেটি। আর ফিরে আসেনি। সম্ভাব্য সব জায়গায় খোঁজেও তাঁর সন্ধান মেলেনি আজও। ওই সময় ছেলে সত্য চন্দ্র স্থানীয় সরকারি মুজিব কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র ছিলেন। অভাবের সংসারে অনেক কষ্ট করে তাঁকে পড়ালেখা করালেও ভাগ্য বিড়ম্বনায় ছেলেটিকে হারিয়ে এখন নিঃস্ব প্রায় কানাই লাল শীল।
কানাই লালের স্ত্রী চায়না রাণীর শারীরিক অবস্থাও বেশি ভালো নয়। সেও ছেলের চিন্তায় শয্যাশায়ী। এ ব্যাপারে কানাই লাল ২০১১ সালের ১২ নভেম্বর সখীপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছিলেন। সন্তান হারানোর বেদনায় বাবা-মার চোখের পানিও শুকিয়ে যাচ্ছে। নীরব যন্ত্রণা ক্রমশই তাঁদের বোবা করে দিচ্ছে। অভিমানী ওই ছেলের অপেক্ষা কবে শেষ হবে জানা নেই তাঁদের। তবে মান ভেঙে ছেলে একদিন বাড়ি ফিরবে এ বিশ্বাসই যেন বাবা কানাই লাল শীল ও মা চায়না রাণীকে বাঁচিয়ে রেখেছে।
কানাই লাল আবেগ আপ্লুত হয়ে বলেন, ‘আমি এখনো বিশ্বাস করি আমার ছেলে বেঁচে আছে। যেখানেই থাকুক ভালো থাকুক। তবে সে যদি একটিবার আমাদের দেখা দিত, মরেও শান্তি পেতাম। এখন মরে গেলে একটাই দুঃখ থাকবে, ছেলেটা কেমন আছে জেনে যেতে পারলাম না, আমি মরে যাওয়ার আগে একটিবার দেখা দে বাবা।’