নিজস্ব প্রতিবেদক: মুক্তিযুদ্ধকালে কাদেরিয়া বাহিনীর বঙ্গবন্ধুর কাছে অস্ত্র জমা দেওয়ার ঘটনার ৫০বছর পূর্তি অনুষ্ঠানে যোগ দিলেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। তিনি মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ অবদান রাখার জন্য বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর ভূয়সী প্রশংসা করেন।
সরকার ও দলের পক্ষ থেকে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক ও আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক সংসদ সদস্য মৃণাল কান্তি দাস কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তমের উদ্যোগে আয়োজিত অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন বলে আয়োজকেরা জানিয়েছেন। এ ছাড়া আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত দলের সভাপতিমণ্ডলীর সাবেক সদস্য ও বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর বড় ভাই আবদুল লতিফ সিদ্দিকীও ওই অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।
সভায় বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম বলেন, জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর আদর্শে পথ চলতে চাই। বাংলার বাপ একটাই। তিনি হচ্ছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পর আমি এতিম হয়েছি। এতে আমার, আমার ভাই ও পরিবারের অনেক বড় ক্ষতি হয়েছে। তিনি বলেন, ১৯৭২ সালের ২৪ জানুয়ারি বিন্দুবাসিনী সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ে যে অস্ত্র জমা দিয়েছিলাম, তা নতুন প্রজন্ম জানেই না। সেই স্মৃতি ধরে রাখতে স্মৃতিস্তম্ভ করার জন্য মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের প্রতি দাবি জানিয়েছেন তিনি।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, কাদের সিদ্দিকী ইতিহাসের গর্বিত সন্তান। মুক্তিযুদ্ধে তাঁর বীরত্বগাথা ইতিহাসে বিরল। যুদ্ধ শেষে বিজয়ী হয়ে তিনি এক লাখ চার হাজার অস্ত্র বঙ্গবন্ধুর কাছে জমা দিয়েছিলেন। বাংলাদেশ সৃষ্টিতে কাদেরিয়া বাহিনীর গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা রয়েছে। তিনি আরও বলেন, কাদের সিদ্দিকীর বক্তব্যে স্থানীয় আওয়ামী লীগ সম্পর্কে যে মনোভাব প্রকাশ, তা আমার জন্য বিব্রতকর। আমরা এই অনুষ্ঠানকে জাতীয় রাজনীতির প্রেক্ষাপটে দেখতে চাই। সম্পর্কের কোনো অবনতি থাকলে তা জাতীয়ভাবে নিতে চাই না। জাতীয়ভাবে আমরা মনে করি, এটি একটি ঐতিহাসিক দিন।
অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক সংসদ সদস্য মৃণাল কান্তি দাস বলেন, দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের তাঁকে এই অনুষ্ঠানে যোগ দিতে নির্দেশ দিয়েছেন। তাই তিনি এখানে এসেছেন। তিনি কাদের সিদ্দিকীর উদ্দেশে বলেন, আসুন, আমরাও আপনাকে নিয়ে পথ চলতে চাই। ২০২৪ সালে যে নির্বাচন হবে, ওই নির্বাচনে এক বৃত্তে থাকবেন মুক্তিযুদ্ধের বীর সেনানীরা। সার্থক পিতার সার্থক উত্তরসূরি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির বিরুদ্ধে লড়ব।
২৪ জানুয়ারি মঙ্গলবার টাঙ্গাইল শহীদ মিনার চত্বরে আয়োজিত ওই অনুষ্ঠানে কাদেরিয়া বাহিনীর অস্ত্র জমাদান দিবস উদ্যাপন কমিটির আহ্বায়ক আবু মোহাম্মদ এনায়েত করিম সভাপতিত্ব করেন। এতে বক্তব্য দেন সাবেক মন্ত্রী ও সাবেক সংসদ সদস্য আবদুল লতিফ সিদ্দিকী, বীর মুক্তিযোদ্ধা কবি বুলবুল খান মাহবুব, কবি আল মুজাহিদী, বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর সহধর্মিণী নাসরিন সিদ্দিকী, জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা হামিদুল হক মোহন, জেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক আবদুস ছালাম চাকলাদার, আবুল কালাম আজাদ বীর বিক্রম, হাবিবুর রহমান তালুকদার খোকা বীরপ্রতীক প্রমুখ।
তবে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা ওই অনুষ্ঠানে যোগ দেননি। তবে একজন মন্ত্রী ও একজন কেন্দ্রিয় নেতা ওই অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ায় বিষয়টি নিয়ে টাঙ্গাইলে ব্যাপক আলোচনা চলছে। সাধারণ মানুষ মনে করছেন, আগামী নির্বাচন সামনে রেখে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে কাদের সিদ্দিকীর কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের ঐক্য হচ্ছে। এ কারণে একজন মন্ত্রী এবং সংসদ সদস্য ওই অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন। গত ২৩ ডিসেম্বর বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সপরিবার গণভবনে গিয়ে সাক্ষাৎ করেন। তারপর থেকেই রাজনৈতিক মহলে গুঞ্জন শুরু হয়, তিনি আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন জোটে যাচ্ছেন। ওই সাক্ষাতের পর এটিই ছিল বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তমের টাঙ্গাইলে প্রথম জনসভা।